কালের সাক্ষী, নাটেশ্বরের দেউল

প্রকাশঃ জানুয়ারি ৩১, ২০১৫ সময়ঃ ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:২৬ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডটকম:

History-part-of-Bangla

ইতিহিাস কালের সাক্ষী হয়ে আছে । তেমনি মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ি থানার নাটেশ্বর গ্রামে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রাচীন বাংলার বৌদ্ধদের বিশাল স্মৃতিচিহ্ন, দেউল। পূর্বের বঙ্গ ও সমতট অঞ্চলের রাজধানী বিক্রমপুরে অবস্থিত এ দেউল (দেবালয়) বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস সন্ধানে নতুন পথ খুলে দিয়েছে। এটি বৌদ্ধদের বিহার বা বেশ কয়েকটি মন্দিরের সমষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে এ দেউলের ইতিহাস জানা এবং এর ঐতিহ্য সংরক্ষণের কাজ চলছে পুরোদমে। গোটা দেউলের ইতিহাস জানা গেলে বাংলা এবং বিশ্বের ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই স্পষ্ট হবে বলে ধারণা করছেন ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিকরা। প্রখ্যাত পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্করের বাল্যজীবন, শিক্ষালাভের সূত্রও উন্মোচন করতে পারে নাটেশ্বর দেউল।

জাহাঙ্গীরনগর ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, ঐতিহ্য অন্বেষণ ও অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন এবং কয়েকজন বিশেষজ্ঞ দেউলটির প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান, উত্খনন ও গবেষণা করছেন। প্রায় সাত একর জমি জুড়ে দেউলটি বিস্তৃত। এর মধ্যে মূল ঢিবিটির আয়তন প্রায় দুই একর। ঢিবির প্রায় ২৫ শতাংশ জমিতে বর্তমানে খনন কাজ চলছে। ২০১৩ সালের শেষার্ধ এবং এ বছরের উত্খননে নাটেশ্বর দেউলে ৯ মিটার × ৯ মিটার পরিমাপের একটি বৌদ্ধ মন্দির, অষ্টকোণাকৃতি স্তূপ, ইট নির্মিত নালা, আরো বেশ কিছু স্থাপত্যিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। বৌদ্ধ মন্দিরটির অনেকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পশ্চিম-দক্ষিণ কোণা ২৪০ মিটার উচ্চতায় টিকে আছে। ১ দশমিক ৭৫ মিটার প্রশস্ত দেয়ালের ভিত্তিমূলে ঝামা ইট ব্যবহার করা হয়েছে। সম্ভবত আদ্রতা রোধক হিসেবে ঝামা ইট বেছে নেয়া হয়েছে। মন্দিরের দেয়ালের বহিঃস্থ দিকে অসাধারণ অলংকরণ করা হয়েছে। হাতে কাটা ইটের অপূর্ব জালি নকশা এবং বিভিন্ন আকৃতির ইটের কাজ মন্দিরকে অসাধারণ নান্দনিক স্থাপত্যের রূপ দান করেছে।

নাটেশ্বরের সদ্য আবিষ্কৃত এ বৌদ্ধ দেউলটি সংরক্ষণে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। প্রাচীন স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রেখে কাদামাটির মর্টার, পুরনো ইট পুনঃব্যবহার ও ঐতিহ্যবাহী কুমারদের দ্বারা তৈরি বিভিন্ন আকারের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এটিই প্রথম কোনো স্থাপত্য নিদর্শন যা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

দেশে এখন পর্যন্ত প্রায় ২২-২৩টি বৌদ্ধ বিহার আবিষ্কৃত হয়েছে। নাটেশ্বর দেউলে চলমান খননের ফলে তাত্পর্যপূর্ণ প্রত্নবস্তু আবিষ্কৃত হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এটিও বিহার হিসেবে প্রমাণিত হলে বিক্রমপুরের ও বাংলার আঞ্চলিক ইতিহাসের অনেক সূত্রই খুঁজে পাওয়া যাবে। পুরো ব্যাপারটি নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।

দেশের ও দেশের বাইরের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও ব্যাপক উত্সাহ তৈরি হয়েছে নাটেশ্বরের বৌদ্ধ বিহারকে কেন্দ্র করে। বৌদ্ধ ভিক্ষু, গুরু ও ধর্মাবলম্বীরা দেউলটি দেখার জন্য প্রায়ই ভিড় করছেন।

আপনি চাইলেও একবার ঘুরে আসতে পারেন হাজার বছরের ঐতিহ্য বহনকারী এ স্থান থেকে।

প্রতিক্ষণ/এডি/মাসুদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G